প্রকাশিত: : এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম
এই ভোগান্তি দিয়েই বছর শুরু হয় দোকানঘর ও বাসাবাড়ির ভাড়াটিয়াদের।
পয়লা বৈশাখকে ঘিরে বাঙালির সংস্কৃতি আর উৎসবের যে প্রাণময়তা, তার আড়ালেই রয়ে যায় এক শ্রেণির মানুষের চাপা দুশ্চিন্তা আর অর্থনৈতিক চাপের গল্প। বছরের এই প্রথম দিনেই বাড়তি ভাড়া, ইজারা আর খাজনার বোঝা নিয়ে দিন শুরু করেন দোকানঘরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির ভাড়াটিয়ারা। একদিকে যখন শহরজুড়ে উৎসবের সাজ, মেলা আর হালখাতার আয়োজন চলে, তখন অন্যদিকে অনেকে হারিয়ে ফেলেন নিজেদের ব্যবসার জায়গা কিংবা বছরের শুরুতেই পড়েন আর্থিক চাপের মুখে।
লক্ষ্মীপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল হাসেম কিংবা পান বিক্রেতা শাহজাহানের মতো অসংখ্য মানুষের কাছে পয়লা বৈশাখ মানে খরচ বাড়ার আনুষ্ঠানিক দিন। হাটবাজার, নদীঘাট আর ফুটপাতজুড়ে নতুন ইজারাদার বসে, বাড়ে টোল ও খাজনা। ফলে ব্যবসার জায়গা হারানো কিংবা ভাড়া বহুগুণ বেড়ে যাওয়া হয়ে দাঁড়ায় নিয়মিত ঘটনা। শুধু ব্যবসায়ীই নয়, বাসাবাড়ির ভাড়াটিয়ারাও পড়েন বাড়তি ভাড়ার চাপের মুখে। বছরের এই সময়টাতেই বাড়ির মালিকেরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন, অনেকে পুরনো ভাড়াটিয়াকে সরিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া তুলতে চেষ্টা করেন।
এ যেন বছরের শুরুতেই আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য হারানোর একটা দুঃসহ চিত্র। মুদি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন যেমন বলেন, “পয়লা বৈশাখ মানেই আমাদের কাছে আতংক। হালখাতা করতে হয়, বাড়তি ভাড়া-খাজনা দিতে হয়, নতুন ইজারাদারের কাছে খরচ বাড়ে।” এমন অভিজ্ঞতা দেশের শহর থেকে গ্রামগঞ্জ—সবখানেই এক।
স্থানীয় সরকার বিভাগের ইজারা নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর হাট-বাজারের ইজারা নবায়ন হয় এবং প্রায়শই আগের বছরের তুলনায় বেশি মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়। ফলে নতুন ইজারাদারও বেশি আদায় করতে বাধ্য হন, যা কার্যকর হয় পয়লা বৈশাখ থেকেই। স্থানীয় শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদের মতে, “এটা অনেকটা নিয়মের মতোই চালু হয়ে গেছে। ফলে সাধারণ মানুষকে বাড়তি খরচের মুখে পড়তে হয়।”
এই বাস্তবতায়, পয়লা বৈশাখের উৎসবের আমেজ অনেকের কাছে এখন আর শুধু আনন্দের দিন নয়। বরং কারও কারও জন্য এটি উদ্বেগ আর আর্থিক চাপের এক আনুষ্ঠানিক দিন। বর্ষবরণ উৎসবের রঙিন দিনটির আড়ালেই লুকিয়ে থাকে একশ্রেণির মানুষের বঞ্চনার গল্প।