প্রকাশিত: : এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির জান্তা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল ভারত। যদিও সামরিক জান্তা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ হারালেও, নীতিগত অবস্থান বদলায়নি দিল্লি। তবে দৃশ্যপট বদলে যায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন কৌশল নিতে বাধ্য হয় ভারত।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ পেয়ে আসছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর ভারতের কাছে সেই সুবিধা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ফলে আবারও কৌশলগত গুরুত্ব বাড়ে ভারতের উচ্চাভিলাষী ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প’-এর। তবে এই প্রকল্পের প্রধান অঞ্চল রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভারতের নীতিনির্ধারকরা ঘনিষ্ঠতা বাড়ান সেই অঞ্চলের শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি-র সঙ্গে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া বিষয়ক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর একাধিকবার আরাকান আর্মির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নয়াদিল্লি। মিজোরামের লংত্লাই জেলার ডেপুটি কমিশনার গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে পালেতাও টাউনশিপ সফর করেন এবং সেখানে কালাদান প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের সিনিয়র কর্মকর্তারাও আইজলে আরাকান আর্মির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব যোগাযোগের পেছনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু কালাদান প্রকল্প নয়, সীমান্ত নিরাপত্তা ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলার কৌশল হিসেবেও ভারত আরাকান আর্মিসহ মিয়ানমারের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। গত বছর নভেম্বরে দিল্লিতে আয়োজিত এক সেমিনারে ভারত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সেনাবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে আরাকান আর্মি ছাড়াও চিন এবং কাচিন সশস্ত্র সংগঠনও অংশ নেয়। এই সেমিনারে ভারতের সিনিয়র কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মিয়ানমারের বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রথম আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পুরো উদ্যোগ একদিকে ভারতের নতুন নীতির ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রতিক্রিয়া পরিমাপেরও চেষ্টা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের তথ্যমতে, গত বছরের জুন থেকেই মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়ে কৌশলগত নীতিপরিবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল দিল্লি। ৫ আগস্টের বাংলাদেশ সংকট সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ভারতকে বাধ্য করে।